বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল বাজার এলাকায় অবস্থিত সেতুটি এখন মারাত্মক ঝুঁকির মুখে। সেতুর নিচে স্থাপিত তিনটি গার্ডারের মধ্যে দুটি গার্ডারে বড় ধরনের ফাটল দেখা দেওয়ায় যে কোনো মুহূর্তে এটি ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয় পরিবহন চালক ও এলাকার বাসিন্দারা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে সেতুর নিচে বালুর বস্তা ফেলে সাময়িকভাবে সেতুটিকে সচল রাখার চেষ্টা করছে। তবে এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয় বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি—যত দ্রুত সম্ভব স্থায়ী সংস্কার বা বিকল্প সেতু নির্মাণ করা না হলে বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠিসহ দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
প্রতিদিন হাজারো যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, পিকআপ ও মোটরসাইকেল এই সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করে। ফাটল ধরা গার্ডার ও অস্থায়ী বালুর বস্তার ওপর নির্ভর করে এভাবে যান চলাচল অব্যাহত থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে সওজ সেতুর দুই প্রান্তে গতিরোধক বসিয়েছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ডও ঝুলিয়ে দিয়েছে।
স্থানীয় মোটরসাইকেলচালক সিয়াম হাওলাদার বলেন, “বহু বছরের পুরোনো এই সেতু। অনেক দিন ধরে কোনো সংস্কার হয়নি। এখন সেতুর নিচের মাটি সরে গিয়ে পাশে বড় গর্ত হয়েছে। ছোট গাড়ি গেলেও সেতু কেঁপে ওঠে।”
পদ্মা সেতু চালুর পর এ রুটে ভারী যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বেড়েছে জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাসেম বলেন, “এই সেতু যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। তাই দ্রুত স্থায়ী সংস্কার বা বিকল্প সেতু নির্মাণ করা জরুরি।”
স্থানীয় সূত্র জানায়, ছয় দিন আগে সওজের কর্মকর্তারা সেতুটি পরিদর্শন করেন। পরদিনই অন্তত ৪০ জন শ্রমিক নিয়ে জরুরি সংস্কারকাজ শুরু হয়। গার্ডারের নিচে বালুর বস্তা ফেলে সেতুটিকে সাময়িকভাবে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী শাহীন খান বলেন, “সেতুর দুই পাশের মাটি নদীর স্রোতে ক্ষয় হয়ে যাওয়ায় গার্ডারে অতিরিক্ত চাপ পড়ছে। পদ্মা সেতু চালুর পর এই রুটে যানবাহনের চাপ বহু গুণ বেড়েছে। গার্ডারের অন্তত তিনটি স্থানে বড় ফাটল তৈরি হয়েছে। আপাতত বালুর বস্তা ফেলে সেতুটি সচল রাখা হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে স্থায়ী সংস্কার কাজ শুরু হবে।”
স্থানীয়রা বলেন, শুধু অস্থায়ী ব্যবস্থা নয়—দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় সেতুটির স্থায়ী সংস্কার বা নতুন সেতু নির্মাণই হতে পারে স্থায়ী সমাধান। না হলে দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হবে।
