📰 🏗️ সরকারি কালভার্ট ভেঙে ইট বিক্রি ও নির্মাণে অনিয়ম: ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ
বিল পরিশোধ হলেও কাজ শেষ অক্টোবরের শেষে, সরকারি সম্পদের অপব্যবহারের অভিযোগ
তালতলী (বরগুনা): বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোটবগী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সুন্দরীয়া গ্রামে সরকারি একটি পুরাতন কালভার্ট ভেঙে ইট বিক্রি এবং নতুন কালভার্ট নির্মাণে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম মেম্বারের বিরুদ্ধে। সরকারি নিয়ম লঙ্ঘন করে কাজ শেষ হওয়ার আগেই বিল পরিশোধ করা হয়েছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
পুরোনো কালভার্টের ইট বিক্রি ও বিলম্বিত কাজ
সরকারি কালভার্ট ভেঙে ইট বিক্রি ও নির্মাণে অনিয়ম: ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ওই এলাকায় ব্যবহারের অযোগ্য একটি পুরাতন কালভার্টের স্থানে নতুন কালভার্ট নির্মাণের জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালমা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেন স্থানীয় পল্লী অবকাঠামো কমিটি (পিআইসি)-কে, যার সভাপতি ছিলেন অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আবুল কালাম।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কাজ সমাপ্তির আগে বিল দেওয়ার সুযোগ না থাকলেও, বরাদ্দের অর্থ ২০২৫ সালের জুন মাসের শেষ দিকে ছাড় করা হয় এবং কাজ শেষের আগেই বিলের পে-অর্ডার রাখা হয়। অথচ ইউপি সদস্য আবুল কালামের দাবি, কাজ সম্পন্ন হয়েছে অক্টোবর মাসের শেষের দিকে।
সবচেয়ে বড় অভিযোগটি এসেছে পুরাতন কালভার্টের উপকরণ নিয়ে। স্থানীয়দের দাবি, নতুন কালভার্ট নির্মাণের সময় পুরাতন সরকারি কালভার্টটি ভেঙে ফেলা হয় এবং এর ইট ও অন্যান্য উপকরণ নতুন কাজে ব্যবহার করা হয়। অবশিষ্ট ইট ও মালামাল পরবর্তীতে ইউপি সদস্য আবুল কালাম বিক্রি করে দেন। স্থানীয় ফিরোজ মিস্ত্রি এই অভিযোগের সত্যতা আংশিকভাবে নিশ্চিত করে বলেন, “কাজ শেষ হওয়ার পর যে ইট ও মালামাল অবশিষ্ট ছিল, সেগুলোর কিছু আমি ইউপি সদস্যের কাছ থেকে ক্রয় করেছি।”
প্রশাসনের বক্তব্য
সরকারি সম্পদের এমন অপব্যবহার ও অনিয়ম নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম সাংবাদিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং পুরাতন কালভার্টের মালামাল কোথায় গেছে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
অন্যদিকে, উপজেলা প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন পুরাতন মালামাল ব্যবহারের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, “যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাতে এই কালভার্ট নির্মাণ সম্ভব নয়। তাই পুরাতন কালভার্টের একটি সাইট ধরেই নতুন কালভার্টটি অনেক বড় করা হয়েছে। পুরাতন কালভার্টের মালামাল বিক্রি করার বিষয়ে আমি কিছু জানি না।”
তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সেবক মণ্ডল বিষয়টি নিয়ে দ্রুত তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “পুরাতন কালভার্ট বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। এটি টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি হওয়ার কথা। এভাবে যদি বিক্রি করে থাকে এবং পুরাতন মালামাল নতুন কালভার্টে ব্যবহার করে থাকে, তাহলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয়রা সরকারি অর্থে (এডিপি) বাস্তবায়িত এই প্রকল্পে অনিয়ম, সরকারি সম্পদ বিক্রি এবং কাজ বিলম্বে শেষ হওয়ার বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
