বরগুনা সদর প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে ভুয়া বিল-ভাউচারে ৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

 

বরগুনা প্রতিনিধি ॥

বরগুনা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে সরকারি তহবিল থেকে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে প্রায় ৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের তীর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা জেরিনা আক্তারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন খাতে জাল বিল তৈরি করে তিনি টাকা উত্তোলন করেছেন। অফিসের বিভিন্ন ব্যয় খাতে খরচ দেখালেও বাস্তবে কাজ হয়নি বলে জানা গেছে।

 

দুই অর্থবছরে লক্ষাধিক টাকার জালিয়াতি

সূত্র জানায়, লায়লা জেরিনা আক্তার টিএও হিসেবে যোগদানের পর থেকেই নিয়মিতভাবে জাল বিল-ভাউচার তৈরি করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের কাজ করে আসছেন। মোটরসাইকেল ব্যবহার না করেও মোটরযান মেরামত খাতে টাকা তুলেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বৈদ্যুতিক অবকাঠামো মেরামত, মনোহরি মালামাল ক্রয়, কম্পিউটার মেরামত, যন্ত্রপাতি ও মোটরযান মেরামত খাতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ৭০০ টাকা। পরের অর্থবছর ২০২৪-২৫ সালে কর্মচারী ও প্রতিষ্ঠানের আনুষঙ্গিক ব্যয়, মনোহরি, বৈদ্যুতিক অবকাঠামো ব্যয়, অফিস সরঞ্জাম ও কম্পিউটার সামগ্রী ক্রয় খাতে বরাদ্দ ছিল আরও ১ লাখ ৮৮ হাজার ২০০ টাকা।

 

অভিযোগ রয়েছে, দুই অর্থবছরেই এসব খাতে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে পুরো বরাদ্দের বড় অংশই তুলে নেওয়া হয়েছে।

 

স্বাক্ষরবিহীন ও একই হাতের লেখায় একাধিক ভাউচার

বিল-ভাউচারগুলোর যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে, বেশিরভাগ বিলেই বিক্রেতার কোনো স্বাক্ষর নেই। আবার ক্রেতার স্বাক্ষরের স্থানে একই হাতের লেখায় একাধিক স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে। এতে অনিয়মের বিষয়টি স্পষ্ট বলে দাবি করেছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র।

 

কম্পিউটার মেরামত খাতে ‘কম্পিউটার প্লানেট’ নামের একটি দোকানের নামে ভুয়া বিল তৈরি করে কীবোর্ড ও প্রিন্টার মেরামতের ব্যয় দেখিয়ে ১৫ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। একইভাবে আরও কয়েকটি দোকানের নামে জাল প্যাড ব্যবহার করে বিল-ভাউচার তৈরি করে অর্থ উত্তোলন করা হয়।

 

ব্যবসায়ীদের বক্তব্য

বরগুনা শহরের কম্পিউটার প্লানেটের স্বত্বাধিকারী মামুন জানান, “আমি এ ধরনের কোনো বিল-ভাউচার দিইনি। আমার দোকানের নামে ভুয়া প্যাড তৈরি করা হয়েছে।”

 

তিশা কম্পিউটার অ্যান্ড স্টেশনারীর স্বত্বাধিকারী মো. শাহ জামাল বলেন, “আমার দোকানের নামে যে প্যাডে মালামাল লেখা, তা আমার হাতে লেখা নয়। আমরা এমন কোনো ভাউচার দিইনি। আমার দোকানের নামে ভুয়া প্যাড ব্যবহার করা হয়েছে।”

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, তারা এ ধরনের কোনো বিল-ভাউচার দেননি। তাদের স্বাক্ষর ছাড়া ভাউচার তৈরি করা হয়েছে এবং কম্পিউটার দোকানের মাধ্যমে এসব বানানো হয়েছে।

 

অভিযুক্ত কর্মকর্তার বক্তব্য

এ বিষয়ে বরগুনা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা জেরিনা আক্তার বলেন, “আমার অফিসের এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করার পরই আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তোলা হয়েছে। এটা প্রতিহিংসামূলক।”

 

কম্পিউটার মেরামত খাতে ১৫ হাজার টাকা উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ফোনে এসব বিষয়ে কথা বলা ঠিক হবে না। আপনি অফিসে আসুন, সরাসরি কথা বলি।”

 

সরকারি অর্থ আত্মসাতের এ অভিযোগ নিয়ে এলাকাজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অভিভাবক থেকে শুরু করে শিক্ষকদের মাঝেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।