ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল) ড. মো. মঈনুল ইসলামকে বাধ্যতামূলকভাবে অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। সোমবার (২৭ অক্টোবর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় এবং জনস্বার্থে তাকে সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান প্রয়োজন বিবেচনা করে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮–এর ধারা ৪৫ অনুযায়ী ড. মঈনুল ইসলামকে অবসর দেওয়া হয়েছে। তিনি অবসরজনিত সব সুবিধা পাবেন। আদেশটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।
এদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন প্রকৌশলী মঈনুল ইসলাম। গণপূর্ত অধিদপ্তরের তিনটি বড় প্রকল্প—র্যাব সদর দফতর নির্মাণ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ প্রকল্প এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আবাসিক ভবন নির্মাণে বিস্তৃত দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
দুদক সূত্র জানায়, বিতর্কিত ঠিকাদার ও কথিত যুবলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমের সঙ্গে যোগসাজশে বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম করেন মঈনুল। জি কে শামীমের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ ঘুষ ও কমিশন গ্রহণের তথ্যও অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে।
এর আগে ৫ জানুয়ারি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে ড. মঈনুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুদকের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম ও সহকারী পরিচালক গাজী নোয়ামুল আহসান প্রকৌশলী–ঠিকাদার সিন্ডিকেট ও প্রকল্পে অনিয়ম সম্পর্কিত তথ্য নেন তার কাছ থেকে। ২৬ ডিসেম্বর দুদক তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করে এবং অভিযোগের পক্ষে পর্যাপ্ত নথিপত্র সংগ্রহ করে।
অভিযোগ অনুযায়ী—
র্যাব সদর দফতর নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়ম করে জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেন;
স্বাধীনতা স্তম্ভ প্রকল্পে ১৩.৫ শতাংশ হারে কমিশন নেন;
রূপপুর আবাসিক ভবন প্রকল্পে ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ হয় তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়।
গণপূর্ত ঠিকাদার সমিতি এবং অধিদপ্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারীরাও তার বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছিলেন দুদকে।
দুদকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রকৌশলী মঈনুল ইসলামের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং তার বাধ্যতামূলক অবসর আদেশকে সেই অনুসন্ধানের ফলাফলের সঙ্গে সম্পর্কিত বলেই মনে করা হচ্ছে।
